আমি দেখতে চেয়েছি মৃত্যুর পর বেঁচে থাকি কিনা : সক্রেটিস

0
83

 

সরকার হুমায়ুন 

সক্রেটিস মারা যাচ্ছিলেন। শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে আসছিল; তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য বিষ মেশানো হচ্ছিল। মৃত্যুদৃশ্য দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল। সক্রেটিস মৃত্যুদন্ড কার্যকরে জড়িত কর্মীদেরকে জিজ্ঞেস করছিলেন, “দেরি হয়ে যাচ্ছে, কতক্ষণ লাগবে বিষ পিষতে?”

তার শিষ্যরা  কাঁদতে কাঁদতে তাকে বলছিল,”আপনি কি পাগল? আমরা চাই আপনি আরও একটু সময় বাঁচুন! যে বিষ পিষছে তাকে আমরা ঘুষ দিয়েছি, তাকে ধীরে ধীরে বিষ মিশাতে রাজি করিয়েছি।”

সক্রেটিস বাইরে গিয়ে বিষ পিষে যাওয়া লোকটিকে বললেন, “আপনি খুব বেশি সময় নিচ্ছেন। মনে হচ্ছে আপনি খুব দক্ষ নন। আপনি কি একাজে  খুব নতুন? আপনি কি আগে কখনও এটি গ্রাইন্ডিং করেননি? আপনি কি কখনও একজনকে বিষ দেননি? আপনি কি অদক্ষ কর্মী?

গ্রাইন্ডার বলল,” আপনার এত তাড়া কেন? আমি এটিকে ধীরে ধীরে পিষছি যাতে আপনি আরও একটু সময় পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারেন,

একটু বেশি সময় বাঁচুন, পৃথিবীকে একটু বেশি সময় দিন । অথচ, আপনি পাগলের মতো বলছেন, দেরি হয়ে যাচ্ছে। মরার এত তাড়া কেন?”

সক্রেটিস বললেন, “আমি খুব তাড়াহুড়া করছি কারণ, আমি মৃত্যুকে দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই – মৃত্যু কেমন। আমি  এটাও দেখতে চাই, মৃত্যু হলেও আমি বেঁচে থাকি কি না। আসলে আমি দেখতে চাই  দৈহিক মৃত্যুর সাথে আমি মরে যাই কিনা? আমি দেখতে চাই মৃত্যু হলেও আমি বেঁচে থাকি কিনা । কিন্তু কীভাবে পারবো?”

সক্রেটিসকে বিষ দেওয়া হয়েছিল। তার বন্ধুরা বিলাপ করছিল; তারা বিচলিত হয়ে পড়েছিল। তাদের জ্ঞানবুদ্ধি কাজ করছিল না। তারা বুঝতে পারছিল না,

সক্রেটিস কি করছিলেন? তিনি তাদেরকে বলছিলেন, “বিষ আমার হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছেছে,  আমার পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত। এই অংশটি  সম্পূর্ণ মৃত — তোমরা এটুকু  কেটে নিলেও আমি জানব না। কিন্তু আমার বন্ধুরা, আমি তোমাদেরকে বলি, যদিও আমার পা মরে গেছে, আমি এখনো বেঁচে আছি। এর মানে একটা জিনিস নিশ্চিত — আমি আমার পা ছিলাম না। আমি এখনও আছি, আমি জীবিত আছি।

আমার মধ্যে কিছুই ম্লান হয়নি এখনো।” সক্রেটিস বলতে লাগলেন, “ আমার পা দুটো চলে গেছে;  মৃত্যু এখন আমার  উরু পর্যন্ত চলে এসেছে। তোমরা আমার ডান উরু পর্যন্ত কেটে ফেললে আমি কিছুই অনুভব করব না। কিন্তু আমি এখনও আছি  এখানে! আর এখানে আমার বন্ধুরা কাঁদছে!”

সক্রেটিস বললেন, “কেঁদো না, দেখো! এখানে তোমাদের জন্য শেখার একটি সুযোগ রয়েছে: একজন মানুষ মারা যাচ্ছে এবং তোমাদেরকে জানাচ্ছে  যে তিনি এখনও বেঁচে আছেন। তোমরা আমার পা পুরোপুরি কেটে ফেলতে পারো – তবুও আমি মরব না, তবুও আমি থাকব।

আমার হাতও দূরে সরে যাচ্ছে; আমার হাতও মারা যাবে। আহ! কতবার নিজেকে চিনিয়েছি এই হাত দিয়ে — যে হাতগুলো এখন চলে যাচ্ছে — কিন্তু আমি এখনো এখানেই আছি।”

আর এভাবেই মরার সময় সক্রেটিস কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, “আস্তে আস্তে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে

শান্তিপূর্ণভাবে, সবকিছু ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু আমি এখনও অক্ষত। কিছুক্ষণ পরে আমি হয়তো তোমাদেরকে জানাতে পারব না, কিন্তু না -এটা আমাকে ভাবতে দাও যে, কিভাবে আমি আর নেই। কারণ, এত শরীর হারানোর পরও যদি আমি জীবিতই আছি, কেমন করে-

তাহলে কি আর একটু শরীর নষ্ট হয়ে গেলে আমার আমি শেষ হয়ে যাবে? আমি হয়তো তোমাদেরকে জানাতে পারব না — কারণ

তা কেবল শরীরের মাধ্যমেই জানানো  সম্ভব — তবুও আমি থাকব।” এবং একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি বলেন, “এখন,  সম্ভবত আমি তোমাদেরকে চূড়ান্ত কথা বলছি: আমার জিহ্বা ব্যর্থ হচ্ছে। আর একটা কথাও বলতে পারবো না,

তবু আমি বলছি, ‘আমি আছি’।”

মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন, “আমি এখনও জীবিত।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here