বাংলায় ডক্টরেট ডিগ্রিধারী প্রথম নারী

১০৪তম জন্মবার্ষিকী

0
118

সাহিত্য ডেস্ক 

বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় ছিল ষাটের দশক। মূলত এ সময় থেকেই পূর্ব বাংলার বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করে। ঠিক সেই সময়টিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নীলিমা ইব্রাহিমের আগমন। ১৯৫৬ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে ।

নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী। তিনিই প্রথম বাঙালি নারী, যিনি বাংলায় ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

নীলিমা ইব্রাহিমের জন্ম ১৯২১ সালের আজকের দিনে— অর্থাৎ ১১ অক্টোবর। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি।

নীলিমা ইব্রাহিমের জন্মগত নাম নীলিমা রায়চৌধুরী। ১৯৪৫ সালে ইন্ডিয়ান আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে বিয়ে করেন। পের নীলিমা ইব্রাহিম নামেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

বাল্য কিংবা শিক্ষাজীবন দারুণ গৌরবোজ্জ্বল ছিল নীলিমা ইব্রাহিমের। ১৯৩৫ সালে চারটি বিষয়ে লেটার নম্বর নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে প্রথম শ্রেণী লাভ করেন। ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক’ বিষয়ে ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

ষাটের দশকের শুরুতেই তার বেশ কিছু উপন্যাস ‘বিশ শতকের মেয়ে’, ‘একপথ দুইবাঁক’, ‘কেয়াবন সঞ্চারিণী’ প্রকাশিত হয়। তা ছাড়া নীলিমা ইব্রাহিমের বেশ কিছু প্রবন্ধ এ সময় সাহিত্যিক সমাজে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ‘শরৎ প্রতিভা’, ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলার কবি মধুসূদন’ এবং তার গবেষণাধর্মী বই ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি সমাজ ও বাংলা নাটক’ সুধীমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংশিত হয়। এরই মধ্যে তিনি শক্তিশালী লেখক হিসেবে নিজের আসনটি পোক্ত করেন। এসব উপন্যাস ও প্রবন্ধে তিনি বিশেষ করে নারীদের কথা বলার চেষ্টা করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার কথাই তার গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় ছিল। তিনি বাঙালি নারীকে দেখতে চেয়েছেন— নারীরাও মাথা উঁচু করে হেঁটে চলবে। মেরুদণ্ড যেন বাঁকা না হয়।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করলে নীলিমা ইব্রাহিম সেখানকার একজন সম্মানিত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। শ্রদ্ধেয় বিচারপতি কে এম সোবহান এর প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। নীলিমা ইব্রাহিমের এই কাজের বিশাল অভিজ্ঞতার খানিকটা ফসল আমরা পেয়েছি তার অমূল্য গ্রন্থ ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ এর মাধ্যমে।

১৯৭২ সালে থেকে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি ছিলেন ড. নীলিমা ইব্রাহিম। এ সময় থেকে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল চালিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন মহিলা সমিতি মিলনায়তন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here