কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দুই বাংলাতেই খুব সমাদৃত। ঔপন্যাসিক হিসেবে তাঁর তুমুল খ্যাতি হলেও শুরুটা হয়েছিল কবিতা দিয়েই। আর তাঁর কবিতা লেখার সূচনাও হয়েছিল মজার ছলেই। ডানপিটে সুনীলকে বশে রাখতে তাঁর শিক্ষক বাবাকে খুব বেগ পোহাতে হতো। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর অফুরন্ত সময়। এ সময়টাতে দুরন্ত সুনীলকে আটকে রাখতে তাঁর বাবা এক ফন্দি আঁটলেন।
কয়েক দিন অনুবাদ করে দেখানোর পর সুনীল খেয়াল করলেন, তাঁর বাবা ভালো করে না পড়েই সই বা টিক চিহ্ন দিয়ে দেন। এতে তাঁর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। এবার ইংরেজি কবিতার লাইনের হিসাবের সঙ্গে মিল রেখে নিজেই কবিতা লিখতে শুরু করলেন। ওদিকে বাবাও আগের মতো ভালোভাবে না দেখেই স্বাক্ষর দিয়ে যেতে লাগলেন ছেলের খাতায়।
কিন্তু সুনীল এভাবে কাব্য লিখে কি তা কেবল পকেটে বন্দী করে রাখতে পারেন! তাই পছন্দের এক মেয়ের উদ্দেশে ‘একটি চিঠি’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখে তিনি পাঠিয়ে দিলেন ডাকে। মেয়ের বাড়িতে পাঠানোর সাহস হলো না অবশ্য, পাঠালেন নাম করা পত্রিকা দেশ-এর ঠিকানায়।
ছোট, বড়—সবার সঙ্গেই রসিকতা করে কথা বলতেন কথাসাহিত্যের এই বরপুত্র। একবার এক আড্ডায় বিখ্যাত ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায়ের সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁকে সুনীল প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি বাঙালির ইতিহাস: আদি পর্ব লিখে আর লেখেননি কেন?’ নীহাররঞ্জন বললেন, ‘আমি দীর্ঘদিন জেলে ছিলাম, তখন আমার হাতে খুব সময় ছিল, তাই বইটি লিখতে পেরেছিলাম। এখন তো ব্যস্ত। তাই আর লিখতে পারছি না।’ এ সময় সুনীল যা বললেন তা শুনে হেসে উঠল পুরো মজলিশ, ‘আপনাকে তবে আবার জেলে ঢোকানো উচিত। যাতে করে আপনি বাঙালির ইতিহাস পুরোটা শেষ করতে পারেন।’
সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী অর্ধেক জীবন ও আনন্দবাজার পত্রিকা