তারিক মনজুর
পিএইচডির ভাইভা দিচ্ছি। পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুবুল হক। আমাকে তিনি একটা একটা করে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছেন। তাঁকে খানিক মনঃক্ষুণ্ন মনে হচ্ছে। আমি যথাসম্ভব গুছিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। বোঝার চেষ্টা করছি, আমার গবেষণায় কোনো ফাঁক রয়ে গেল কি না। থিসিসের কতটুকু বাড়তি আর কতটুকু ঘাটতি, মাঝেমধ্যে সে কথাও তিনি বলছিলেন। খুব ঠান্ডা মেজাজের মানুষ মাহবুবুল হক। প্রায় নিরুত্তাপভাবেই ভাইভা শেষ হচ্ছিল। হঠাৎ উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বললেন, ‘বাংলা বানান নিয়ে আমিই প্রথম বই লিখেছি বাংলাদেশে। আমার কাজ আপনার গবেষণায় এল না কেন?’
আমি বিনীতভাবে বললাম, ‘বাংলা বানান নিয়ে নতুন প্রস্তাব যাঁরা করেছেন, তাঁদের অভিমত নিয়ে একটি অধ্যায় আমি করেছি। সেই অধ্যায়ে আপনার নাম নেই। কিন্তু আপনার কাজের কথা থিসিসের একাধিক জায়গায় উল্লেখ করা আছে।’
১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমি ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ নামে ১৪ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। এসব নিয়ম ১৯৮৮ সালে প্রণয়ন করা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড তাদের সুপারিশ করা নিয়ম একত্র করে ‘পাঠ্যবইয়ের বানান’ (১৯৯২) নামে একটি শব্দ সংকলন গ্রন্থ বের করে। বইটির সম্পাদনা পরিষদে মাহবুবুল হক ছিলেন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে ‘পাঠ্যবইয়ে বাংলা বানানের নিয়ম’ (১৯৯২) নামে আরেকটি বই করেন। এই বই বিপুল পাঠকপ্রিয় হয়।