সৈয়দ তোশারফ আলী
আমরা ভাগ্যবান কারণ, এই উপমহাদেশে ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মত বড় মাপের কবিদের জন্ম হয়েছে। আমাদের চিন্তা-চেতনায়, অনুভবে ও উপলদ্ধিতে তাঁদের মতো কবির অবদান বিভিন্নভাবে মিশে আছে, যা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। যারা সংকীর্ণচিত্ত ও ভেদবুদ্ধির মানুষ তাদের কথা আলাদা। নিজের গ্রহণ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে কার কাছ থেকে কতটুকু গ্রহণ করবো নিজেদের সমৃদ্ধ করার জন্য। আমরা কার কাছ থেকে কতটুকু গ্রহণ করবো তা নির্ভর করে আমাদের নিজেদের গ্রহণ ক্ষমতার ওপর।
যারা মনে করেন ইকবালের কাব্যকুঞ্জে কেবল ইসলামী ফুল ফুটেছে তারা তার বাগানের ফুলের বৈচিত্র্য ঠিকমতো অবলোকন করেননি। যদি করতেন তাহলে নিশ্চয়ই অবাক হতেন তার ‘নতুন শিবালয়’ কবিতাটি পাঠ করে। যে কবিতায় মন্দিরের বাহ্মণকে তিনি বলেন, ‘মোর স্বদেশের প্রতি ধূলিকণা দেবতা আমার কাছে।’ তাঁর রচিত এবং উস্তাদ রবি শংকরের সুরারোপিত ‘সারে জাঁহাসে হিন্দুস্তা হমারা’ সঙ্গীতটি শুনলে যে কেউ দেশপ্রেমে উদ্বেলিত হবেন। যেমন, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্ক সম্মেলনে কলকাতা ইয়ুথ স্কয়ার পরিবেশিত এই গানটি শুনে আমি নিজে মুগ্ধ হই। ইকবালের তারানায়ে মিল্লি ‘মিলন সঙ্গীত’ নামে অনুবাদ করে ড. অমিয় চক্রবর্তী বাংলা ভাষায় ইকবাল চর্চার সূচনা করেন, তিনি নিজেও ছিলেন একজন বড় মাপের আধুনিক কবি এবং পাশ্চাত্যের কাব্যচর্চা সম্পর্কে বিস্তর ধারণা রাখতেন; তিনি একদা ইকবালের জাভেদনামা (শাশ্বতগাঁথা) কাব্যগ্রন্থটি কবিগুরুকে পাঠিয়ে তার সঙ্গে প্রেরিত চিঠিতে এর কবিতাগুলোর বৈচিত্র্য ও চিন্তার গভীরতা পরখ করতে তাঁকে অনুরোধ করেন। নেহেরু তার জেল থেকে ১৯৩৩ সালে ২৯ মার্চ তাঁর কন্যা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা পত্রে ভারতীয় কতিপয় শ্রেষ্ঠ মনীষী সম্পর্কে তাকে একটা ধারণা দেন। এর মধ্যে ছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রামানুজম ও চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন। এরপর তিনি যোগ করেন, ‘এখানে আর একজন লোকের নাম আমি করব-স্যার মোহাম্মদ ইকবাল। উর্দুতে এবং বিশেষ করে ফার্সি ভাষার একজন প্রভাবশালী কবি তিনি, অনেকগুলো অতি সুন্দর স্বদেশি কবিতা লিখেছেন।’ উল্লেখ্য পাঞ্জাবের কৃষকদের মিছিলে ওই সময়ে ইকবালের কবিতার লাইন, ‘গন্ধম জ্বালা দে, জ্বালা দে’ স্লোগান হিসেবে উচ্চারিত হতো, জেলে থেকেও সেখবর নেহেরু রাখতেন।
ইকবালের বিখ্যাত ‘আসরারে খুদি’ কাব্যগ্রন্থের অনুবাদ করেন ক্যামব্রিজের খ্যাতিমান প্রাচ্যবিদ অধ্যাপক আর.এ. নিকলসন। ক্যামব্রিজের আর এক প্রখ্যাত আরবি ভাষার পণ্ডিত এ. জে অ্যারবেরি ছুটিতে গেলে ইকবালের উপর দায়িত্ব দেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ক্লাস নেওয়ার। এ থেকেই বোঝা যায় ইকবালের জ্ঞানের ব্যপ্তি ও গভীরতা। তিনি ‘শেকোয়া’ লিখে সাড়া ফেলে দেন এবং রক্ষণশীল মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরাগভাজন হন। সেই বিরাগ অনুরাগে পরিণত করার জন্য তাকে লিখতে হয় ‘জওয়াবে শেকোয়া’। তিনি ঋক বেদের একটি মন্ত্র ‘আফতাব’ তথা ‘সূর্য’ নামে অনুবাদ করে বিপাকে পড়েন। তাঁকে ‘কাফের’ ফতোয়া দেওয়া হয়। এই খবর পেয়ে তিনি কষ্ট পান ও চোখের পানি ফেলেন।
ইসলামী আইন বিজ্ঞানের ওপর একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনার পরিকল্পনা করেছিলো। এরজন্য প্রয়োজনীয় মাল-মশলাও তিনি জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনার পর তিনি আর সেই গ্রন্থ রচনায় অগ্রসর হওয়া সমীচীন মনে করেননি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জ্ঞানের জগৎ। তবে ভারতের অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে তিনি ইংরেজিতে ৬টি বক্তৃতা দেন, যার সবগুলো ছিল ধর্ম ও দর্শনের উপর। এই বক্তৃতাগুলো ‘ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এরকম প্রাঞ্জল ইংরেজিতে ধর্ম ও দর্শনের ওপর আলোচনা অন্য কোনো ভারতীয়কে করতে দেখা যায়নি। এই বক্তৃতামালায় তিনি অ্যারিস্টল, প্লাটো, জেনো, কান্ট, হেগেল, হিউম, রাসেল, নিউটন, আইনস্টাইন, হোয়াইটহেড, নীটশে প্রমুখ দার্শনিক বিজ্ঞানীদের, এনেছেন এবং তাদের চিন্তা ভাবনার সমালোচনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। সেই সঙ্গে নিজের বক্তব্যকে তুলে ধরেছেন। পাশ্চাত্য দর্শনের সঙ্গে এরকম তুলনামূলক বিচার করে ধর্ম ও দর্শন বিষয়ে নিজস্ব অভিমত তুলে ধরার মতো যোগ্য লোক উপমহাদেশে বিরল। কোরআনের একজন নিষ্ঠাবান পাঠক ছিলেন বলেই তিনি শরিয়তের সময়োপযোগী ব্যাখ্যা করার ব্যাপারে পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হন। মুসলিম সমাজের মাজাহাবগত বিভক্তি বিবেচনায় রেখে পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতায় ইজমা এবং ইসতিহাদের প্রয়োগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করার যোগ্যতা তিনি দেখাতে সক্ষম হন। কারণ, কোরআন হাদিস ও ফেকাহ সম্পর্কে তার প্রচুর পড়াশোনা ছিল। কিন্তু উপমহাদেশের শিক্ষায় অনাগ্রসর সমাজ ছিলো রক্ষণশীল। তবুও ঝুঁকি নিয়ে ইকবাল ধর্মীয় চিন্তার পূনর্গঠনে সাহস দেখান। মুসলিম রক্ষণশীল সমাজ যদিও তাঁর সেই চিন্তাকে সাগ্রহে গ্রহণ করেনি। তুরস্কের নবজাগরণ দেখে তিনি যতটা আশান্বিত হয়েছিলেন তেমন জাগরণ উপমহাদেশে হয়নি। তাই মুসলিম সমাজেরও চেহারায় তেমন পরিবর্তন আসেনি। এই রক্ষণশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রতিবেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজ, আর্য সমাজ প্রভৃতি সংগঠনকে কাজ করতে দেখা যায়। রাজা রামমোহন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখও সনাতন সমাজের সংস্কারে মূল্যবান ভূমিকা রাখেন। ইকবাল রাজনীতিতে না জড়ালে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেতেন। আজ ইকবালকে নিয়ে অনেক দেশেই গবেষণা হয়। পাকিস্তান তাকে ধারণ করতে কতটুকু সক্ষম হয়েছ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষ অর্জনের জন্য সবদেশেই তার চর্চা হওয়া বাঞ্চনীয়।
ভারতের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এম কে পল্লীকর তার ‘সার্ভে অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’-তে এক জায়গায় আক্ষেপ করে বলেছেন, ভারতের মুসলমানদের মধ্যে কেনো ইবনে সিনা, আল রাজি, আল মাসুদী, আল ফারাবী কিংবা আল গাজ্জালী প্রমুখের মতো মণীষীর জন্ম হলো না। এর উত্তরে রুশোর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলবো, মাটির গুণাগুনের ওপর নির্ভর করে কোথায় কি ধরণের ফল-ফসল ফলবে। তারপরও এই ভক্তিপ্রবণ ভারতীয় উপমহাদেশে লালন, নজরুল, ইকবাল, হুমায়ুন কবির, আবু সায়ীদ আইয়ুব, ড. কুদরাত এ খোদা, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী আব্দুল ওদুদ প্রমুখের মতো সাধক, ভাবুক, চিন্তক তো জন্ম নিয়েছে। সপ্তদশ শতকের ভারতীয় সাধক শায়ক আহমদ সারহিন্দী ছিলেন তৎকালীন সুফীবাদের তীক্ষè সমালোচক। তাঁর বিশ্লেষণমূলক সমালোচনার ছোঁয়া পেয়ে সুফী সাধনা নবতর দ্যুতি লাভ করে এবং একটি নতুন সাধনরীতির জন্ম হয়। সুফী সাধনার অন্য সব ধারা বা পদ্ধতি এসেছে মধ্য এশিয়া ও আরব ভূমি থেকে, কিন্তু একমাত্র সারহিন্দীর সাধন পদ্ধতি ভারত থেকে আফগানিস্তান ও এশীয় রাশিয়ায় আজ অব্দি জীবস্ত রয়েছে। ইকবাল প্রদত্ত এ তথ্য ঐতিহাসিক পন্নীকরের আক্ষেপ কিছুটা হলেও দূর করার দাবি রাখে।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে সহজ সমাধান অকল্পনীয়। কোথাও কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তা নিরসনে নীরব এবং সরব কোনো কূটনীতিই এখন আর তেমন সুফল বয়ে আনছে না। কোথাও যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাস কিংবা দেখা দিলে তা সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘও কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব ও মর্যাদা রক্ষার জন্য ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। মুখে আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল, কুরআন ও মুসলিম উম্মাহর দোহাই পাড়া হলেও মুখে শেখ ফরিদ আর বগলে ইট রেখে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যাবে না। অনেক সময় আমরা বুঝি আর না-ই বুঝি শত্রুর সঙ্গে কোলাকুলি করি আর মিত্রের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ি। মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়ে এখন ৫৭টিতে দাঁড়িয়েছে কিন্তু তাদের সম্মিলিত শক্তির বিচার করতে গেলেও নিরাশ হতে হয়। মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার প্রশ্নে একদা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী শূণ্য যোগ শূণ্য সমান শূণ্য, এই সমীকরণ উপস্থাপন করেছিলেন। তাঁর এই সমীকরণ অনেককে মর্মাহত করেছিলো। কিন্তু তিনি যে কতটা সঠিক ও বাস্তববাদী ছিলেন সেটা এতোদিনে প্রমাণিত। ইসরাইলে হামাসের ৭ অক্টোবরের অতর্কিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নেতানিয়াহুর ঘোষিত যুদ্ধে ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিদিন নর-নারী ও শিশু অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করে চলেছে। ইতিমধ্যে ছয় মাসের অসম যুদ্ধে প্রায় চল্লিশ হাজার ফিলিস্তিনী নাগরিক জীবন হারিয়েছে। এই ধ্বংস ও মৃত্যুর বিভীষিকা কবে শেষ হবে কেউ বলতে পারেন না। পাশ্চাতোর কাছে ইসরায়েল রাষ্ট্রটি রক্ষা করা ফিলিস্তিনীদের জীবন রক্ষার ওপর অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ কথার তাৎপর্য হলো প্রয়োজনে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফিলিস্তিনীদের কায়িক অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার দরকার হলে, তা-ই করা হবে। এই রাষ্ট্রদর্শন আর যা-ই হোক মানবিক যে নয়, সেটা দর্শনের ছাত্র হিসেবে আল্লামা ইকবাল উম্মোচন করে দেখিয়ে গেছেন অনেক আগেই।
ইকবাল দর্শনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ঐক্য ও মানবিক বিশ্ব গড়ার ভাবনা। মুসলিম মিল্লাতের ঐক্য এবং সেই সঙ্গে গোটা মানবমন্ডলীর ঐক্য নিয়ে তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন। কখনও তিনি বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছেন দার্শনিকের নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে। কখনও বিষয়টির উপর আলোকপাত করেছেন রাজনীতিকের বাস্তববোধ ও দূরদৃষ্টি নিয়ে। তাই কখনও তা হয়ে উঠেছে একাডেমিক, কখনও তা আবর্তিত হয়েছে ব্যবহারিক নানা সমস্যাকে কেন্দ্র করে।
ইউরোপে অধ্যয়নকালে ইকবাল উপলদ্ধি করেন যে, পশ্চিমী জাতিসমূহের মহতী আদর্শের অন্তরালে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী কূটকৌশল। ইউরোপীয় উগ্র জাতীয়তাবাদ যে অমানবিক রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, সেটা তিনি আগাম আঁচ করতে সক্ষম হন। ইউরোপের বাতাসে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গন্ধ টের পান। ১৯০৭ সালে ইউরোপে অবস্থানকালে তিনি একটি কবিতায় বলেন। ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্বল জাতিগুলোকে শোষণ করা। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন এই বলে, ‘জাতীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ আসন্ন। এসব জাতি তাদের বাসা নির্মাণ করেছে দুর্বল গাছের ডালে, ঝড়ের ঝাপটা সর্বনাশ ডেকে আনবে।
ইউরোপীয় উগ্র জাতীয়তাবাদের মডেল ইকবালকে মোটেও আকর্ষণ করেনি। তিনি গোটা মানব জাতিকে নিয়ে একটি মিল্লাত (ভ্রাতৃ সমাজ) গঠনের উপর জোর দেন। তিনি ঐশিবাণীর অধিকারী জাতিসমূহের মধ্যেও সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনার কথা বলেন। এমনকি তিনি জাতিতে জাতিতে বিরোধ-বিদ্বেষ দেখে জাতিসংঘ গঠনের বদলে মানবসংঘ গঠনের অনুকূলে অভিমত দেন।
প্রাচ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের দুর্বল দেশগুলোকে প্রভুত্বের জোয়ালে বেঁধে রাখার পাশ্চাত্য ফন্দি ধরতে তাঁর মোটেও ভুল হয়নি। তিনি দেখতে পান পাশ্চাত্যের কর্তৃত্বপ্রবণ দেশগুলো মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা জিইয়ে রাখছে এবং এ সব দেশের জনসাধারণকে কর্মবিমুখ জীবন-দর্শনে তন্দ্রাচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে নানাভাবে মদদ দিচ্ছে। ইকবাল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শয়তানের কাছ থেকে পাওয়া আফিমে এসব দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী হয়েছে অদৃষ্টবাদী, আর এক শ্রেণির ধর্মানুরাগী হয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের পদলেহী। তাঁর মনে জিজ্ঞাসা জাগে, আল্লাহ কি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করলেন মানুষকে, আর মানুষ করছে কি? প্রাচ্যের মানুষ করছে পাশ্চাত্যের পায়রবি আর পাশ্চাত্য ছুটছে ডলারের পেছনে। সর্বত্রই চলছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু শয়তানের রাজত্ব। এই কারসাজির বিরুদ্ধে দাঁড়াবার কথা ভাবতে গিয়ে তিনি সক্রিয় ও সচেতন হবার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেন। জোর দেন চারিত্রিক দৃঢ়তা অর্জনের উপর। যে-ধর্ম, যে-দর্শন মানুষের ব্যক্তিত্বকে প্রস্ফুটিত করতে এবং সমুন্নত রাখতে সাহায্য করে না, তেমন ধর্ম ও দর্শনকে তিনি ধিক্কার জানান। নব জাগরণের জন্য তিনি ধর্মীয় চিন্তা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। সন্ধান করেন ধর্মের এক সংস্কৃত, পরিশীলিত ও যুক্তিসিদ্ধ রূপ। বলা বাহুল্য, কোরআন ও ঐতিহ্যের বিজ্ঞান থেকে তিনি এই সত্যের সন্ধান পান যে, মানুষের সত্তা ঐশীগুণে গুণান্বিত হয়ে এমন মুক্তদানায় রূপান্তরিত হতে পারে, যা সমুদ্রের সান্নিধ্যে গিয়েও নিজের সত্তা অক্ষুন্ন রেখে তরঙ্গের অভিঘাতে আরও উজ্জ্বল দীপ্তি লাভ করতে পারে। সসীম খুদী সম্পর্কে এই ব্যাখ্যা চিন্তার জগতে ইকবালের শ্রেষ্ঠতম অবদান। আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস এবং ভালোবাসা মানুষকে অধিকতর শক্তিমান করে, সমাজের সেবায়, মানবতার কল্যাণে মানুষকে নিবেদিত করে। এই প্রতীতি তিনি পান ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য মন্থন করে। ইসলামের সাম্যবাদী, মানবতাবাদী ঐক্যমুখীন সার্বজনীন জীবন দর্শনকে তিনি আধুনিক পরিভাষায় উপস্থাপিত করেন তাঁর কবিতায়, দর্শনে ও ভাষণে-যাতে মানুষের মনে শক্তিমান শয়তানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার দুরন্ত সাহস ও প্রচণ্ড আবেগ সঞ্চারিত হয়।
সম্মিলিত ইবাদত ইসলামের একটা বড় বৈশিষ্ট্য। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সংঘবদ্ধভাবে আদায় কারার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং শুক্রবারের জুম্মার সালাত এবং মক্কার কেন্দ্রীয় মসজিদ বায়তুল্লাহ শরীফের চারপাশে বাৎসরিক সম্মিলনীর কথা বিচার করলে বোঝা যায় ইসলামী ইবাদত পর্যায়ক্রমে মানুষের পারস্পারিক সম্পর্কের সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবেই ইসলাম একটি সামাজিক ও মানসিক জীবনাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করছে। এছাড়াও সালাতে সামাজিক সাম্যবোধের চেতনা হয় শক্তিশালী। বিদূরিত হয় শ্রেণি-বিভেদ ও বর্ণবাদী বিদ্বেষ। এ প্রসঙ্গে আবেগাপ্লুত হয়ে তার এক বক্তৃতায় বলেন, ‘দক্ষিণ ভারতের গর্বিত উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের যদি প্রতিদিন পাঁচ বার অস্পৃশ্যদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হতো, তাহলে অতি অল্প সময়ে সংঘটিত হত এক মহতী আধ্যাত্মিক বিপ্লব।’
দর্শনের ভাষায় ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইকবাল বলেন: ‘যাবতীয় সসীম খুদীর স্রষ্টা ও রক্ষক সর্বাধার খুদীর একক স্বরূপ থেকেই প্রতীয়মান হয় সর্বমানবের অন্তর্নিহিত ঐকা। ইসলামে অনেকে একত্রে সালাত আদায় করার যে ব্যবস্থা আছে, জ্ঞানগত মূল্য ছাড়াও তার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, যে-সব সংস্কারের দেয়াল মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে রেখেছে, তা ভূমিসাৎ করে তাদের জীবনে এক অন্তর্লীন ঐক্যের বাস্তব উপলব্ধি জাগানো।‘
গোটা মানবমণ্ডলী নিয়ে এক মহাজাতি গঠনের কাজটি মোটেই সহজ বলে বিবেচিত হয়নি ইকবালের কাছে। তবে ইসলাম যে সুচিন্তিত অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে অন্তহীন বিরোধ-বৈচিত্র্যের মধ্য থেকে একটি সামগ্রিক আদর্শ ও চেতনা গড়ে তুলতে অনেকখানি কৃতকার্য হয়েছে-একথা তিনি মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন ও তুলে ধরেছেন তাঁর বক্তব্যে।
আধুনিক সভ্যতাকে সংকটমুক্ত করার লক্ষ্যে আল্লামা ইকবাল একটা ব্যবস্থাপত্রও দিয়ে গেছেন। বিশ্বের ভাবুক সমাজ এখনও এ সম্পর্কে ভেবে দেখতে পারেন। বিশ্বামানবতার মুক্তির জন্য ইকবালের ব্যবস্থাপত্রে প্রথমেই বিশ্বজগতের একটা আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি জীবনে আধ্যাত্মিকতার উজ্জীবন ঘটানোর স্পার্মস দেয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, মানব সমাজের আত্মিক ও বৈষয়িক উন্নয়নের জন্য একটা বিশ্বজনীন নীতিমালা গ্রহণ করার আহবান জানানো হয়েছে।
ঐক্য ও সংহতির কথা উঠলে সংগঠনের কথাও আসে। ঐক্যকে টেকসই করার জন্য সাংগঠনিক কাঠামোর কথা ভাবতে হয়। ইকবালও ভেবেছেন। কিন্তু ব্যক্তিত্ববাদী দার্শনিক হিসেবে শুধুমাত্র সংগঠনের ওপর নির্ভর করাটাকে তিনি পছন্দ করেননি। যেমনটি ফ্যাসিস্ট ও কমিউনিস্টরা ইস্পাত কঠিন ঐক্যের জন্য প্রধানত সংগঠনের উপর নির্ভর করেন। ইকবাল বিশ্বাস করতেন, ‘কোনো জাতির ভাগ্য শুধুমাত্র সংগঠন শৃঙ্খলার মাধ্যমে গড়ে তোলা যায় না। তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় সামাজিক মানুষের ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও শক্তি। সংগঠনের বাড়াবাড়ি ব্যক্তিত্বের বিনাশ ঘটায়।’ ইকবাল বিশ্বাস করতেন, ‘অতি সংগঠিত সমাজে ব্যক্তি একদিকে শক্তিলাভ করলেও অন্যদিকে তার আপন আত্মারই ঘটে অবলুপ্তি।’
ইকবালের প্রস্তাবনা:
এক. জাতীয় পর্যায়ে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম থাকা প্রয়োজন। নাম যাই হোক না কেন, তার গঠনতন্ত্র এমন হতে হবে যাতে যে-কোনো চিন্তাধারার অনুসারী লোকের ক্ষমতা লাভের ও নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার আলোকে দেশ, জাতি ও জনগণকে পথ নির্দেশ দানের সুযোগ থাকবে।
দুই, দেশের যুব ও স্বেচ্ছাসেবীদের কাজ হবে সমাজ সেবা, রীতি-নীতির সংস্কার করা, শহরে ও পল্লীতে অর্থনৈতিক প্রচার চালানো এবং ব্যবসা সংক্রান্ত সংগঠন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আনি। এটাই তাদেরকে মাদকাসক্তি মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত রাখবে এবং গঠনমূলক পথে চালিত করবে। সমস্ত বড় বড় শহরে পুরুষ ও মহিলাদের সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্র থাকবে। ইতিহাসে কীর্তিমান নর-নারীর অর্জন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা তিন দেওয়া তরুণ সমাজের অন্তরের ঘুমন্ত উদ্যমকে সুসংহত করাই হবে তাদের প্রধান কাজ।
আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লামা ইকবাল এই শতাব্দীর ত্রিশের দশকের পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এসব প্রস্তাব রেখেছিলেন। আজকের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তার সব কটি প্রস্তাবের সমান উপযোগিতা রয়েছে এমন কথা নিশ্চয় কেউ বলবেন না। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, ইকবালের প্রস্তাবাবলীর মধ্যে এমন কিছু দিক-নির্দেশনা রয়েছে যা আজও যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। যেমন, রাজনৈতিক সংগঠনের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা সম্পর্কে তার অভিমত, নারী সমাজকে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ এবং যুব সমাজকে সেবামূলক, গঠনমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ, সেকালের মত একালেও সমান গুরুত্ব বহন করে।
১৯৪৭ সালে পর ১৯৭১ সালে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র দ্বিতীয়বার পরিবর্তিত হয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে এবং তার অগ্রযাত্রা দৃপ্তপদে এগিয়ে চলেছে। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারটিকে বাংলাদেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। বর্তমান সরকারও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থের ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ ও সহানুভূতিশীল। বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তের মানুষ নির্যাতন ও নিস্পেষণের শিকার হলে বাংলাদেশের মানুষ বিচলিত ও ক্ষুদ্ধ হয়। আমাদের বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যেকোনো মানবিক ইস্যুতে সরকার তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পিছ পা হবে না। আশাকরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাহেবও সরব ও নীরব ভূটনীতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিন ইস্যুসহ প্রতিটি ইস্যুতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে ঘরে-বাইরে প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিনি নর-নারী ও শিশুদের রক্ষায়ও সর্বাত্মক উদ্যোগ। নেবেন- তাঁর কাছে এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের। যুদ্ধ বিরোধী এবং ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’- এই
নীতিতে অটল থেকে বাংলাদেশকে ভূমিকা রাখতে হবে।
এই সময়ে যে-সব বিষয় গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে তা হলো।
এক. মুসলিম প্রধান দেশসমৃগুলোর নিজেদের মধ্যকার বিরোধ সন্তুচিত করতে হবে। আমাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেসব দুই দেশ সর্বাত্মক ও শর্তহীন সহযোগিতা দিবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদিনা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়া ও বজায় রাখার প্রশ্নে জাতীয় স্বার্থকে সর্বেতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।, যেহেত্ব বিশ্বে দুর্বলের কোনো বন্ধু নেই, সেহেতু অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে সাদদর্থী হতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সামরিক প্রশিক্ষণ চালু রাখার কথা ভাবতে হবে।
তিন, মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে এবং সুবিচারের নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করতে হবে।
চার, আধুনিক জান-বিজ্ঞানের গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
পাঁচ, নারী শিক্ষার উপর সবিশেষ জোর দিতে হবে।
মাতৃজযার পাশাপাশি ইংরেজি, আরবি, রূপ, জার্মান, স্প্যানিশ, চাইনিজ ভাষা শেখার উপর জোর দিতে হবে। স্যার, সন্ত্রাস, উগ্রপন্থা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী শক্তিকে রুখতে গণতান্ত্রিক নীতিমালা অনুসরণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। অট, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
উপসংহার
আমরা যেন ভুলে না যাই যে, ভালো প্রথা বা ব্যবস্থায়ও ঘুণ ধরে। তাই পুরনো নিয়ম বদলে যায়, তার জায়গায় নতুন নিয়ম আসে এবং ঈশ্বর তার ইচ্ছাকে বিচিত্র পথে কার্যকর করেন। ইংরেজ কবি টেনিসন একথা অনেক আগেই বলে গেছেন। আজ ভয়াবহ পাপের বন্যায় পৃথিবী ডুবতে বসেছে। নূহের কিস্তির কাহিনী আমরা জানি, কিন্তু এই সময়ে কোনো ত্রাতা আমাদরে দৃষ্টির সীমানায় নেই। ঐশিবাণীও আর আসবে না। তাই ইকবাল আমাদের চিন্তায় সাবালক হবার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে জটিল সমস্যারীর্ণ পাপ পড়িল পরিস্থিতি থেকে ধরিত্রীতে উদ্ধার করার পথ নির্দেশ দেওয়া কোনো একক মনীষার কাজ নয়। ইকবালসহ অনেকেই বিচারোদ্ধ নন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রখর থেকে প্রখরতর করে তোলা
অষ্টাদশ ও উনিশ শতকের জাতীয়তাবাদী দর্শনের ত্রুটি বিচ্যুতি বিশ শতকের গোড়ার দিকে স্পষ্ট হতে শুরু করে। যা নিয়ে ইকবাল কথা বলেন, রবীন্দ্রনাথও কথা বলেন। আরও অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু উপনিবেশবাদ বিরোধী লড়াই চালাতে গিয়ে জাতীয়তাবাদকে পরিত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামেও জাতীয়তাবাদ নির্ধারক ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর বহু স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। কিন্তু সত্যিকারের মুক্তির মঞ্জিল হনুজ দুরস্ত।
মার্কিন লেখক এমরি রীভ তার ‘এ্যানাটমি অব পিস’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন কিভাবে ধর্ম-দর্শন, জাতীয়তাবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র ও জাতীয় রাষ্ট্র ইত্যাদি কেনো মানুষের আশা ও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আইনের অধীনে বিশ্ব রাষ্ট্র গড়ার অনুকূলে মতামত দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুন্দর। ক্ষেত্র বিশেষে ইকবালের চিন্তার সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে।
আমরা সবাই এই মাটির পৃথিবীতে আনন্দ ও আশা নিয়ে বাঁচতে চাই। এই পার্থিব জীবনকে সুন্দর ও উপভোগ্য করার ব্যাপারে ধর্ম-দর্শন ও বিজ্ঞানের অবদানকে অস্বীকার করা যাবে না। আমরা সব কিছুকে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক পুষ্টির জন্য আত্মস্থ করতে চাই। জানি সাম্য ও ব্যক্তি স্বাধীনতা অর্জন ও সংরক্ষণ অত্যন্ত কঠিন সাধনার ব্যাপার। এ পথ কুয়াশা ঢাকা অন্ধকারময়। তাই আত্মদীপ জ্বেলে একাকী বেশিদূর যাওয়া যাবে কি? তাই আসুন সবাই মিলে এই দুর্গম পথের যাত্রী হই। পথের দু’পাশে যারা রয়েছে তাদেরকে নিয়ে মানবঐক্য ও মুক্তির পথে অগ্রসর হই।
অনেক সীমান্ধতা ও নজিরবিহীন তীব্র তাপ দাহের মধ্যে এই বক্তব্য সাজাতে হরেছে। তাই ভুল ভ্রান্তি ও অসংগতি থাকা বিচিত্র নয়। যারা জ্ঞানী, গুণী ও প্রজ্ঞাবান তারা আমার ভুল ত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন। কোথাও সংশোধন, সংযোজন-বিয়োজন ও পরিমার্জনা দরকার হলে পরামর্শ দিবেন এবং তা যুক্তিযুক্ত মনে হলে সানন্দে গ্রহণ করা হবে। আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং বাংলাদেশকে ভালোবাসুন। আমি আপনাদের দোয়া প্রার্থী।
সৈয়দ তোশারফ আলী: লেখক ও গবেষক, সম্পাদক সাপ্তাহিক রোববার