আবদুর রহমান মল্লিক
লেখক ও গবেষক ড. আবুল কাসেম হায়দারের ‘সন্দ্বীপ আমার’ গ্রন্থটি তাঁর আত্মজৈবনিক রচনা। লেখকের নিজ উপজেলা চট্টগামের সন্দ্বীপের রূপসৌন্দর্য, তাঁর বেড়ে ওঠা ও জীবনে লব্ধপ্রতিষ্ঠিত হবার পেছনে এই সৌন্দর্যের লীলাভূমি দ্বীপটির ভূমিকার কথা তিনি গ্রন্থটির প্রতিটি ছত্রে ছত্রে উল্লেখ করেছেন। লেখক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন মৃত্তিকা বিজ্ঞানে। মৃত্তিকা বা মাটির টান তাঁর প্রতিটি তন্ত্রীতে আলোড়ন তুলেছে। জন্মভূমির মাটির ঘ্রাণ তাকে বিমুগ্ধ-বিমোহিত করেছে। মনের সবটুকু আবেগ আর ভালোবাসা দিয়ে তিনি মায়ের জঠরের মতো সন্দ্বীপকে তিনি হৃদয়ের অর্ঘ ঢেলে দিয়েছেন। লেখকের কাছে সন্দ্বীপ যেন প্রার্থনার জায়নামাজ।
লেখক তাঁর গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, সন্দ্বীপ তাঁর প্রিয় জন্মভূমি। মগধরা এলাকায় তাঁর বেড়ে ওঠা। ঢাকায় স্থিত হলেও তাঁর হৃদয়ে সবসময় স্থান দখল করে আছে সন্দ্বীপ। এই দ্বীপের মানুষের কল্যাণে তিনি সব সময় নিবেদিত। লেখক এই গ্রন্থটিতে ষোলোটি নিবন্ধে তাঁর জন্মভূমিকে গভীর ভাব-ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছেন। লেখকের স্বপ্নের নাম সন্দ্বীপ। না হলে তিনি কী এভাবে বলতে পারতেন ‘ তোমার তিলের চেয়েও সুন্দর সন্দ্বীপ আমার’। শুধু তাই নয় তিনি অকপটে বলেছেন ‘সন্দ্বীপ আমার বুকের তাজমহল’ অথবা ‘আমার বুকের চড়ে বেড়ে ওঠা সন্দ্বীপ’। সম্রাট শাজাহানের মতো তিনি এ দ্বীপকে সাজাতে চান পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। বঙ্গোপসাগরের ভেতর যেন তিলের মতো সুন্দর টিপ পরে থাকে তাঁর প্রিয় সন্দ্বীপ। সাগরের গর্জনের মাঝে বোটের গটগট ছন্দময় আওয়াজে লেখক বুকের ডানা মেলে হারিয়ে যান বিশাল জলরাশির মাঝে।
তাঁর ভাবনাগুলো গোলাপের পাপড়ির মতো মন মাতানো গন্ধ ছড়ায়। কখনো তাঁর মনের মাঝে সুর তুলে বাউল মন। শৈশবস্মৃতি তাঁর মনের মাঝে ভিড় করে। চার দিকে জল তবুও তারই মাঝে মারবেল, ডাংগুলি, ফুটবল খেলায় মেতে থাকত তাঁর দুরন্ত শৈশব। কলাপাতায় লেখা, স্কুল পালানোর কথা ভোলা কী যায়? এক জীবনে তিনি অনেক কিছু অর্জন করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান বাড়ি, গাড়ি, অর্থবিত্ত, সামাজিক সম্মান- কমতি নেই কোনো । অথচ এই মাটির জন্য একধরনের শূণ্যতা অনুভব করেন। কীসের যেন টান তাঁকে ব্যাকুল করে তোলো।
লেখক খুব বিশ^াসের সঙ্গে বলেছেন, এই দ্বীপে জন্ম না হলে তাঁর স্বপ্নের বিস্তারকে এতো দূর নিয়ে আসতে পারতেন না। জন্ম যদি তাঁর কোনো সমতলে হতো তবে সমতলের হাওয়ায় তিনি ভেসে যেতেন। কিন্তু এই দ্বীপে যে প্রাকৃতিক দৃঢ়তা, বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম, মানুষের বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পাঠ তিনি নিতে পারতেন না। তাই তিনি সন্দ্বীপের কাছে অনেক কিছু শিখেছেন। সন্দ্বীপ তাকে কীভাবে দিনের পর দিন গড়ে তুলেছে তিনি এই গ্রন্থে তার বাণীচিত্র অঙ্কন করেছেন।
বইটি সবার জন্য সুখপাঠ্য হবে বলে বিশ^াস করি। কারণ একজন দেশপ্রেমিক মানুষ তার নিজের জন্মভূমির প্রতি কী ধরনের মনোভাব পোষণ করেন। কীভাবে এলাকার মানুষের ভালাবাসা ও উন্নয়নের সাথে একাত্ম হন – কথাশিল্পীর মতো তিনি সেই অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। লেখক নিজে বইটির প্রকাশক। তাঁর প্রকাশনার নাম-লেখালেখি। প্রথম প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি-২০২৪। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে দুইশত টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী আরিফুর রহমান। বইয়ের প্রাপ্তিস্থান : ১১/ ১ বাংলাবাজার ঢাকা। প্রয়োজনে-০১৫৫২৩৬৭৮৮৩। বইটির পাঠকপ্রিয়তা কামনা করি।