শিক্ষা কারিকুলামের পরিবর্তনকে ইতিবাচক দেখছিনা

সাক্ষাৎকার

0
50

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজল
শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য সমালোচক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো না। রাষ্ট্রকে চালিয়ে নেবার মতো যে রকম লোক তৈরি করা দরকার সে রকম লোক বিশ^বিদ্যালয়গুলো তৈরি করছে না। যারা বিদেশে যাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের প্রধানত তৈরি করে দিচ্ছে। ঢাকা বিশ^বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় এই চারটি বিশ^বিদ্যালয় আইন কানুনের দিক থেকে সায়ত্বসাশিত কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যখন যে সরকার আসে সেই সরকারের পক্ষে লোক তৈরি করে। সরকারই মনে করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তবে বাংলাদেশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা আন্দোলন করলে সরকারের টিকে থাকা কঠিন হবে। যে চিন্তামূলত শিক্ষাবিরোধী, জ্ঞানবিরোধী।
শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার নানাদিক নিয়ে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক অতি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সারেঙ সম্পাদক আবদুর রহমান মল্লিক ।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, বঙ্গবন্ধুর আমলেই বিশ্ববিদ্যালয় আইন হয়েছে। তখন চারটি বিশ^বিদ্যালয় ছিল সায়ত্বশাসিত। সে আইন নানাভাবে বদলে দেবার চেষ্টা জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে। আমরা সেই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চেষ্টা করি। কোনো না কোনো ভাবে আইনটা রক্ষা করেছি। এরশাদ সরকারের আমলে এই আইন একরকম বাতিল করে দিয়েছিল। তখন ঢাকা চট্টগ্রাম রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগরে আন্দোলন সংগ্রাম করে শিক্ষক ও ছাত্ররা। আমরা আন্দোলন করে ও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এরশাদ ঘোষিত যে রেগুলেশন সেটা বাতিল করিয়েছি। জিয়াউর রহমানের সময়ে সায়ত্বশাসনের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছি সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে শিক্ষকদের মাঝে যে দলাদলি দেখা গেল। কিছু শিক্ষক আওয়ামী লীগ করছে, কিছু শিক্ষক বিএনপি করছে। এ সময়ে দলদাস কথাটা সাংবাদিকরা পত্রপত্রিকায় লিখেছিলেন। কতগুলি জিনিস তারা দেখেই লিখেছিলেন। দল করে তারা এই পদ সেই পদ লাভ করতে চায়। আর্থিকভাবে বেনিফিটেড হতে চায়। আবার এদের অনেকের ছেলেমেয়েদের অন্য রাষ্ট্রের নাগরিক করে পাঠিয়ে দেন। বাংলাদেশের ওপর যথেষ্ট আস্থা তাদের নেই। নানান স্বার্থে তারা আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপিকে তারা সমর্থন করে। এ ধরনের লোক দিয়ে একটা রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারেনা। ইন্টেলেকচ্যুয়াল কমিউনিটির যে বিষয় সেটাও হয় না। আওয়ামী লীগ কি একটি রাজনৈতিক দলের ভালো চরিত্র নিয়ে আছে? বিএনপি কি রাজনৈতিক দলের ভালো চরিত্র নিয়ে থাকার চেষ্টা করছে? জাতীয় পার্টি কি সেটা করছে? রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু এরা কি করছেন যারা সরকারে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা সরকার নানাভাবে বিশ^বিদ্যালয়ের ওপর হস্তক্ষেপ করে। স্বাধীন চিন্তাশীলতা ও বিশ^বিদ্যালয়ের সায়ত্বশাসনকে তারা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সিলেবাস কারিকুলাম পাঠ্যসূচি এগুলো লক্ষ করলে দেখা যাবে আজকের পৃথিবীতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা যে পর্যায়ের হওয়া উচিত সে দিকে গভীর চিন্তাভাবনাও নেই। সরকার যাদের ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর করেন তাদেরকে নিয়ে বৈঠক করেই সিদ্ধান্ত নেন। সাধারণ শিক্ষকদের মতামত কেউ জানতে চাননা। আর ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ যারা টাকা দেন তাদের ধারায় চলে যায়। এখানে তাই ইনটেলেকচ্যুয়াল তৈরি হয় না।
বাংলা ভাষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলা ভাষা এখনও পৃথিবীর ভাষাগুলোর মধ্যে উচ্চ অবস্থানেই আছে। দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় এরকম ভাষা পৃথিবীতে দুশোটার মতো। এই ভাষাগুলোকে বলা যায় বিকাশমান ভাষা। যেগুলো ক্রমে বিকশিত হচ্ছে। আর অনেকভাষা আছে যেগুলো বিলীয়মান। যে ভাষাগুলোতে কথা বলার লোক কমছে। যে ভাষাতে কথা বলার লোক একজনও নেই এ রকম ভাষাগুলো হলো বিলীয়মান ভাষা। বাংলা ভাষা একটা বিকাশমান ভাষা হিসেবে আছে। এই যে দুশো ভাষার কথা বললাম বাংলা ভাষার স্থান প্রথম বিশ পচিশটা ভাষার মধ্যেই আছে। অতীতে একটি স্বাধীন জনগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে বিকশিত হবার সুযোগ ছিলনা। ইংরেজ আমলে ইংরেজ শাসকদের রীতি নীতি মেনে চলতে হতো। ইংরেজরা কিন্তু ইংরেজি ভাষাতেই কোলকাতা কেন্দ্রীক একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে যারা সরকারি চাকরি করেছে লেখাপড়া করেছে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত, এদের সাধারণ প্রবণতাই ছিল ইংরেজি ভাষা অবলম্বনে করে কাজ করা। কিন্তু সাহিত্য চর্চা, চিন্তা চর্চা বাংলা ভাষায় ছিল। রামমোহন রায় বলি, ইয়ংবেঙ্গল দল, দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর, অক্ষয় কুমার দত্ত, ইশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কীম চন্দ্র, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া পরবর্তীকালে আরো অনেক লেখক যেমন আবদুল ওদুদ, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ প্রমুখ এর মধ্যদিয়ে যে সাহিত্যে বিকাশ, সেটা অসাধারণ ছিল।
যদি আমরা উনিশ শ খ্রিষ্টাব্দ দেখতে চাই, দেখব জাপান চীন ইন্দোচীনের বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলা ছাড়া ভারতের অন্যান্য প্রদেশ, আফগানিস্তান ইরান ইরাক মিশর থেকে আরম্ভ করে একেবারে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত পৃথিবীর দক্ষিণাংশে বাংলা ভাষা উন্নত ছিল। অন্যকোনো ভাষাই বাংলা ভাষার সমকক্ষ ছিল না। ইংরেজ আমলে দ্রুত ইউরোপীয় চিন্তা গ্রহণ করে যারা বাংলা সাহিত্য বাংলা ভাষার চর্চা করেছেন তারা বাংলা ভাষাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষার যে উন্নতির ধারা বহাল ছিল জ্ঞান বিজ্ঞানের নানান শাখা এবং সাহিত্য চর্চায়, ১৯৮০ সালের পর থেকে যেসব সরকার আমাদের দেশে ক্ষমতায় এসেছে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে- এ সময় সাহিত্যচর্চা আর সেভাবে এগয়নি। উচ্চশিক্ষা গবেষণা সবকিছুতে যেমন বাংলা ভাষা চলে আসছিল তখন দেখা গেল তা কমে যাচ্ছে। হাইকোর্টে সুপ্রিম কোর্টে এখনও বাংলাভাষা যথেষ্ট পরিমাণে আসেনি।
ইংরেজ শাসনামলে দ্রুত ইউরোপীয় চিন্তাচেতনা গ্রহণ করে তারা বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ভাষা চর্চা করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাকে রাষ্টভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষার উন্নতির ধারা বহাল ছিল। ১৯৮০ সালের পর থেকে যে সব সরকার ক্ষমতায় এসেছে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, তখন জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে গেছে। আগে যেমন সবকিছুতে বাংলা ভাষার ব্যবহার চলে এসেছিল সেটা কমে যায়। হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টে বাংলা ভাষা যথেষ্ট পরিমাণে আসেনি।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বাংলা উন্নয়ন বোর্ড নামে একটা বোর্ড ছিল। আমাদের আন্দোলনের ফলেই পাকিস্তান সরকার সেটা করেছিল। উচ্চ পর্যায়ের যে পাঠ্যপুস্তক এবং বাইরের যে জ্ঞান বিজ্ঞান সে ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার উন্নতিতে সহায়ক হবে, এজন্য হয়েছিল বাংলা উন্নয়ন বোর্ড। ড. এনামুল হক ছিলেন এর এই বোর্ডের প্রধান পরিচালক। এরপর ছিলেন ড. আশরাফ সিদ্দীকি। সেই বাংলা উন্নয়ন বোর্ড ১৯৭২ সালে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। ওখানে যারা এমপ্লয়েজ ছিলেন তাদের বাংলা একাডেমিতে নিয়ে আসা হয়। এই ঘটনাটা বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য ক্ষতি হয়েছে। বাংলা উন্নয়ন বোর্ড স্বাধীন বাংলাদেশে রাখা উচিত ছিল। বাংলা একাডেমির কাজ আর বাংলা ভাষা উন্নয়ন বোর্ডের কাজের পার্থক্য ছিল। বাংলা একাডেমি সরকারের তোয়াজ-তোশমদ এর কাজকর্ম করেই শেষ করতে পারেনা। বাংলা ভাষাকে যেভাবে ব্যবহারের কথা সেভাবে বাংলা একাডেমি নেই। যদিও বাংলা একাডেমি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির উদ্বোধন ঘোষণা করেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার। যে নীতি ও বিধিতে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের কোনো কাজে দিচ্ছে না। আমাদের এটি ছিল রাষ্ট্রভাষা দিবস। জ্ঞানবিজ্ঞান সবকিছু চর্চার ভাষা হবে বাংলা। এই অর্থে ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস। ছাত্র ও কিছু মানুষের আত্মদানের ফলে এটার নাম দেওয়া হয় শোকদিবস বা শহীদ দিবস। আবদুল গাফফার চৌধুরীর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।’ এটা মূল স্পিরিট হয়ে এগুচ্ছে। আব্দুল লতিফ একজন শিল্পী ছিলেন তার গান ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিবার চায়’। নানাভাবে তীব্র আবেগের সঙ্গে গানে এবং কবিতায় ২১ শে ফেব্রুয়ারির চেতনা নিয়ে আমরা অগ্রসর হই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আমল, জিয়াউর রহমানের আমল, এরশাদের আমল এই পর্যন্ত বাংলা ভাষাকে বিকশিত করার একটা সরকারি চেষ্টা ছিল। ১৯৯১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে সরকার আসছে ভোটের মাধ্যমে এটা ভিন্ন ধারায় চলে গেছে। বাংলা থেকে ইংরেজিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে ফেলা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে যে বইমেলা হয় এর একটা চাপ সরকারের ওপর আছে। বাংলাকে ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে বাঙালি চেতনাকে অবলম্বন করতে হবে। ফেবুয়ারি ছাড়া বাকি এগারো মাস সেই চেতনা থাকে না। ফেব্রুয়ারি মাসে থাকে সেটাকেও আমি ভালো মনে করি। এটা থাকার ফলে রাষ্ট্রভাষার প্রতি টান এখনো আছে। একুশে বই মেলার চাপ সরকারের ওপর আছে বলেই আমাদের সমাজের উচ্চ শ্রেণির মধ্যে ভাষার প্রতি সে অনুরাগ কাজ করে। আ.লীগ বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে সেটা আছে। এমনকি বামপন্থী নেতারা এই মানসিকতা লালন করেন।
একটি শ্রেণি তাদের ছেলে মেয়েদের আমেরিকা ব্রিটেন কানাডা অষ্ট্রেলিয়া এবং আরো কয়েকটি দেশে নাগরিক করে দিচ্ছে। তারা মনে করেন এটা রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াবেনা। তাদের নেতৃত্বেইতো বাংলাদেশ চলছে। শুরুতে সাড়ে তিন বছর একটা আদর্শ নিয়ে এগিয়েছে কিন্তু তখনও কেউ কেউ মনে করতেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে পারবেনা।
শিক্ষা কারিকুলাম সিলেবাস ক্রমাগত বদলায়। যদি ১৯৪৭ সন থেকে দেখি পাকিস্তান আমল এই তেইশ বছরের মধ্যে দুই তিন বার প্রাথমিকের মাধ্যমিকের সিলেবাস বদলিয়েছে। এখন উচ্চ মাধ্যমিকেও বদলাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থা এক খারাপ অবস্থা থেকে অন্য খারাপ অবস্থায় গেছে। সরকারের নীতি অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় বাইরের কোনো কোনো শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ^ব্যাংক শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য অর্থ দেয়। যে পরিবর্তনটা কারিকুলামের করা হয় তার সবটা জনগণকে জানিয়ে করা হয় না। কারিকুলামের এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক দেখছিনা। সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি এবং সেই অনুসারে যে পরিবর্তনটা করা হয়েছিল তাতে তা ক্ষতিকর করা হয়েছে। এখন পরিবর্তন করে যেটা করতে চাইছে সেটাও ক্ষতিকর দিকেই যাচ্ছে। কী পরিবর্তন হবে সেটা দেশবাসীকে জানালে ক্ষতি কি? ‘আমরা আগামী দশ বছরে এই এই পরিবর্তনটা করব।’ পরিবর্তনটা হবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে মানিয়ে যাতে সবার সাথে ভালোভাবে চলতে পারি। মেধাবী চিন্তাশীল গবেষকদল আবিষ্কার উদ্ভাবন করতে পারবেন। বাইরের দেশ থেকে আমরা নেব, উন্নত দেশগুলোও আমাদের থেকে নেবে। তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একেবারেই মৌলিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। এখানে বিশ^ায়নের কথা আছে। টেকনোলোজির উন্নয়ন হয়েছে। গোটা পৃথিবী এক রাষ্ট্রের মতো হয়ে গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অতীতে যারা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন তাদের বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় আর্টিকেল বের করা যেতে পারে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ঐতিহাসিক ভূমিকা কি? এই বিষয়ে যদি লেখা হয় ভালো। হরপ্রাসাদশাস্ত্রী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে প্রথম বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন তার সম্পর্কে লেখা যায়। মুহম্মদ আবদুল হাই যে বাংলা বিভাগে অবদান রেখেছেন সে বিষয়ে আলোকপাত করা যায়।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, একটা কথা আমরা আগে শুনিনি এখন শুনছি। ‘শিক্ষা আইন’ করতে হবে। শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আলাদা আইন পাকিস্তান আমলে শুনিনি। বাংলাদেশ হবার পরেও আমরা শুনিনি। এটা হয়েছে গত দশ বারো বছর ধরে। এই শিক্ষা আইন কি সেটাও সরকার গোপন রেখে কাজ করছে। এতে ভালো কোনো কাজ হবে আশা করছিলাম। বাইরের যে বৃহৎ শক্তিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন কানাডা ইটালি ফ্রান্স জার্মানি গোটা পৃথিবীর ওপর তাদের কর্তৃত্ব রক্ষা করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে। তারা চায় না দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোতে যথার্থ শিক্ষা দেখা দিক। ওদের মনে ভয় তারা যদি ভালো শিক্ষা পায় তাহলে ওরাতো আমাদের কর্তৃত্ব মানবেনা। এটা নগ্নভাবে দেখা যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট দৌঁড়ে এসে যুদ্ধের আয়োজন করে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে সেটাকে খারাপ ব্যাপার মনে করি। পুতিনকে অভিযুক্ত করেও আমরা বলতে পারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী কারণে ন্যাটো বাহিনী গঠন করে ইউক্রেনে এসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছে। এখানে কোনো সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা দেখা যায় না। সারা পৃথিবীর মানুষ যাতে খেয়ে পরে বাঁচতে পারে সেজন্য একটা ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। জো বাইডেন গোটা দুনিয়ায় সব রাষ্ট্রের ওপর কর্তৃত্ব করতে চাইছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্তৃত্ববাদী বিশ^গ্রাসী পরিকল্পনা চিন্তা ও পদক্ষেপকে প্রতিহত করতে হবে।
রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হবার পেছনে প্রধানত সরকার দায়ী। কিন্তু সরকারের সমস্যা যতই থাকুক প্রকৃত ইন্টিলেকচ্যুয়াল যারা তারা সরকারের সকল ভয়ভীতি অতিক্রম করে সত্যঘটনা বলবার চেষ্টা করে। এবং সেটা জনসাধারণের মাঝে আশার সঞ্চার করে। সরকার তাদের নামে মামলা দায়ের করতে পারে। কিন্তু জনসমর্থন তাদের সাথেই থাকে। এরকম যারা স্বাধীন চিন্তাশীল বিবেকবান ইন্টিলেকচ্যুয়াল তারাই জয়ী হয়। কিন্তু কিছু লোক মেরুদন্ড সোজা করে চলেছেন যেমন ইত্তেফাকের মানিক মিয়া ছিলেন। বাঙালি ভাষা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে কাজ করেছেন। তারও লিমিটেশন ছিল। কিন্তু পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য তার যে স্বাধীন চিন্তা ছিল তা কার্যকর ছিল। তাছাড়া সমকাল একটা পত্রিকা ছিল যার কাজ ছিল বাঙালি চেতনাকে জাগ্রত করা। এবং সেই ধারায় লেখক গোষ্ঠী তৈরি করা। মাওলানা আকরাম খাঁ সম্পাদিত মুহম্মদী পত্রিকাকে কেন্দ্র করে লেখক গোষ্ঠী ছিল। মুহম্মদী পত্রিকা থেকে আলাদা হয়ে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দীন আল আজাদ, আবদুল্লাহ আবু সাঈদ এমন নতুন লেখক যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদি চেতনায় বিশ^াস করেন তারা লিখেছেন। লেখক চরিত্র সংখ্যায় কম হলেও তাদের একটা গুরুত্ব ছিল। মোতাহের হোসেন চৌধুরী, মানিক মিয়া, আবদুল গাফফার চৌধুরী, সমকাল পত্রিকার সম্পাদক, আহমদ শরীফ, আবুল ফজল এমন জনাদশেক সাহিত্যকর্মী পাই তাদের সঙ্গে পাকিস্তান সরকার পেরে উঠত না। এতো সেনাবাহিনী এতো আমলা থাকা সত্ত্বেও। সেটা বাংলাদেশ আমলে হারিয়ে গেছে। দল করার স্বাধীনতা সংবিধান দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা সেটা করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের যে ঐক্যবোধ বিদ্যমান এগুলোকে অবলম্বন করে দৃঢ়তার সঙ্গে সার্বজনীন কল্যাণে কাজ করেন তাই সেরকম লেখক আত্মপ্রকাশ করতে পারছেন না। তারা দলীয় বৃত্তে থেকে দলদাস হয়ে গেছে। দল করা আর দলদাস হওয়া এক কথা নয়। রাজনৈতিক দলসমূহে উন্নতর আদর্শেও চর্চা হচ্ছেনা। কেউ কেউ সেটা হতেই দিচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here